ওহি (وَحُ) আরবি শব্দ। এর অর্থ ইশারা, ইঙ্গিত, গোপন কথা ইত্যাদি। সাধারণত কোনো ব্যক্তির নিকট গোপনে প্রেরিত সংবাদকে ওহি বলা হয়।
ইসলামি পরিভাষায়, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নবি-রাসুলগণের নিকট প্রেরিত সংবাদ বা বাণীকে ওহি বলা হয়। যেমন- আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর উপর আল-কুরআন নাজিল করেছেন। সুতরাং আল-কুরআন হলো ওহি।
ওহি অবতরণ
আল্লাহ তায়ালা নানাভাবে নবি-রাসুলগণের নিকট ওহি প্রেরণ করতেন। তন্মধ্যে দুটি পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ।
ক. ফেরেশতার মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা তার বাণী ফেরেশতার মাধ্যমে নবি-রাসুলগণের নিকট পৌছাতেন। যেমন- হযরত জিবরাইল (আ.) হলেন প্রধান ওহিবাহক ফেরেশতা। তিনি নবি-রাসুলগণের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী নিয়ে হাজির হতেন।
খ. সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে। অনেক সময় আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নবি-রাসুলগণের সাথে কথা বলতেন। যেমন- আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ.)-এর সাথে তুর পাহাড়ে কথা বলেছেন। আমাদের প্রিয় নবি (স.) ও মিরাজের রজনীতে আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন।
প্রকারভেদ: ওহি প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
ক. ওহি মাতলু : অর্থাৎ যে ওহি তিলাওয়াত করা হয়। যেমন- কুরআন মজিদ। কুরআন মজিদ সালাতে তিলাওয়াত করা হয় বলে একে ওহি মাতলু বলা হয়।
খ. ওহি গায়র মাতলু অর্থাৎ যে ওহি তিলাওয়াত করা হয় না। যেমন- হাদিস শরিফ। হাদিস শরিফ সালাতে তিলাওয়াত করা হয় না। এজন্য একে ওহি গায়র মাতলু বলে।
মহানবি (স.)-এর বাণী, কাজ ও অনুমোদনকে হাদিস বলে। হাদিসও ওহির অন্তর্ভুক্ত। কেননা মহানবি (স.) নিজ থেকে কিছু বলতেন না বরং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়েই তিনি কথা বলতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
অর্থ: "আর তিনি (হযরত মুহাম্মদ স.) মনগড়া কোনো কিছু বলেন না। বরং এটা তো ওহি, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।" (সুরা আন-নাজ, আয়াত ৩-৪)
গুরুত্ব
ওহি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওহি সরাসরি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাজিল হয়। এটা হলো অকাট্য জ্ঞান। এতে কোনোরূপ ভুলত্রুটি নেই। ওহির সংবাদ সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে। ওহি সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎস। ওহির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সকল প্রকার জ্ঞান দান করেন। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতারিত বলে এ জ্ঞান পূর্ণাঙ্গ ও অতুলনীয়। আমরা নিজেদের গৃহ সম্পর্কে ভালোভাবে জানি। আমাদের গৃহে কোথায় কোন জিনিস রাখা আছে তা আমরাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারব। বাইরের কেউ তা পারবে না। তদ্রূপ আমরাও অন্যের ঘরে কোথায় কী আছে তা বলতে পারব না। তেমনিভাবে আল্লাহ সারা বিশ্বজগতের স্রষ্টা। তিনি নিজ কুদরতে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার হুকুমেই সকল কিছু পরিচালিত হয়। পৃথিবীর কোথায় কোন জিনিস কী অবস্থায় আছে আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। প্রত্যেক জিনিসের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি অবহিত। সুতরাং তিনি যে সংবাদ-জ্ঞান নাজিল করেন তা অকাট্য। কেউ এরূপ জ্ঞান খণ্ডন করতে পারে না।
আল-কুরআন ও হাদিস ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত। এগুলোর মাধ্যমেই আমরা ইসলামের সকল বিধি-বিধান জানতে পারি। তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদির জ্ঞানও আমরা এগুলো থেকেই লাভ করি। এগুলো না থাকলে আমরা কিছুই জানতে পারতাম না। সুতরাং ওহির গুরুত্ব অপরিসীম। ওহির উপর বিশ্বাস স্থাপন করলে মানুষের ইমান পূর্ণাঙ্গ হয়।
দলগত কাজ: শ্রেণির সব শিক্ষার্থী দুই দলে ভাগ হয়ে একদল ওহির অর্থ ও প্রকার সম্পর্কে মুখস্থ বলবে এবং অন্যদল ওহির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করবে। আবার প্রথম দল গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করবে, দ্বিতীয় দল ওহির অর্থ ও প্রকার সম্পর্কে মুখস্থ বলবে। |
Read more